ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫ , ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​চ্যাটজিপিটির কারণে গবেষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০৪:০১:৩৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০৪:০৪:১৯ অপরাহ্ন
​চ্যাটজিপিটির কারণে গবেষকদের কপালে  চিন্তার ভাঁজ প্রতীকী ছবি
চ্যাটজিপিটি এআই জীবনকে অনেক সহজ করেছে। এটিকে প্রশ্ন করলেই সহজে উত্তর পাওয়া যায়। কবিতা লিখে দেয়া থেকে শুরু করে রেসিপি, গণিত সমাধান, ভার্সিটির অ্যাসাইনমেন্ট, রিপোর্টের সব ধরনের কাজে সাহায্য করতে পারে। গত তিন বছরে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার এতোই বেড়েছে যে এখন গবেষকদের চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে কপালে। তাঁরা বলছেন, মানুষের মস্তিষ্কের পচন ধরাচ্ছে চ্যাটজিপিটি। এখন কেউ আর নিজে থেকে কিছুই চিন্তা করছেন না। সরাসরি দারস্থ হচ্ছেন চ্যাটজিপিটির।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইটির বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ পুরো নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন চ্যাটজিপিটির ওপর। ফলে মস্তিষ্ক হারাচ্ছে তার কার্যক্ষমতা। গবেষকরা বলছেন, প্রবন্ধ লেখার জন্য চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করলে জ্ঞান এবং শেখার দক্ষতা হ্রাস পেতে পারে।

এআই ব্যবহারে মানুষের ‘বুদ্ধির বিকাশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হতে পারে। অনেকে বলছেন, শিক্ষার্থীরা কম বয়সে এআই নির্ভর হয়ে পড়লে তাদের মৌলিক চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতাই তৈরি হবে না।

চার মাস ধরে ৫৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর তিন ধাপে এই গবেষণা চালান গবেষকরা। তারা ৫৪ জন ব্যক্তিকে প্রবন্ধ লেখার টাস্ক দেন। এতে কেউ শুধুই নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহার করে (‘ব্রেন অনলি’ গ্রুপ) প্রবন্ধ লেখেন, কেউ লেখেন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে, আর কেউ লেখেন এআই টুল (চ্যাটজিপিটি) ব্যবহার করে।

প্রবন্ধ লেখার সময় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে ঘটে যাওয়া মস্তিষ্কের তড়িৎ সংকেত পরীক্ষা করেছেন গবেষকেরা। সেই সঙ্গে প্রবন্ধের ভাষা এবং গুণগত মান বিশ্লেষণ করে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা বা সক্রিয়তা পরিমাপ করেছেন। অর্থাৎ এসব পদ্ধতির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা কতটা মনোযোগ দিয়ে ও সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন, তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।

ফলাফলে দেখা গেছে, যারা এআই ব্যবহার করে লিখেছেন, তাদের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। শুধু তা-ই নয়, তারা নিজেদের লেখায় ব্যবহৃত উদ্ধৃতিও মনে রাখতে পারেননি। এমনকি, সেই লেখার ওপর তাদের সম্পৃক্ততার অনুভূতিও ছিল কম।

চতুর্থ ও সর্বশেষ ধাপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ভূমিকা বদলে দেয়া হয়। যারা প্রথম তিন ধাপে শুধু নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহার করেছিলেন, তারা এবার চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন। আর যারা প্রথম তিন ধাপে শুধু এআই ব্যবহার করেছিলেন, তারা এবার মস্তিষ্ক ব্যবহার করে প্রবন্ধ লেখেন।এবারের ফলাফল ছিল রীতিমতো চমকে দেয়ার মতো। দেখা যায়, এআই থেকে মস্তিষ্ক গ্রুপে আসা (এআই-টু-ব্রেন) ব্যক্তিদের ফল খারাপ হয়েছে। তাদের মানসিক সম্পৃক্ততা প্রথম ধাপের অন্য গ্রুপের চেয়ে সামান্য ভালো হলেও ‘ব্রেন-অনলি’ গ্রুপের তৃতীয় ধাপের তুলনায় তা ছিল অনেক কম।

এই ফলাফলের ভিত্তিতে এমআইটির গবেষকেরা দাবি করেন, দীর্ঘদিন এআই ব্যবহারের ফলে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে মানসিক দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। এতে শেখার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। অর্থাৎ যখন তারা নিজেদের মস্তিষ্ক ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছেন, তখন তারা আগের মতো মনোযোগ দিতে বা অন্য দুই গ্রুপের মতো ভালো করতে পারেননি।

নিজেদের গবেষণার বিষয়ে সতর্ক করে গবেষকেরা বলেন, চতুর্থ ও শেষ ধাপে মাত্র ১৮ জন (প্রতি গ্রুপের ৬ জন) অংশ নিয়েছেন। তাই এই ফলাফলকে প্রাথমিক হিসেবে গণ্য করা উচিত। এই ফলাফলের বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে কি এআই আমাদের বোকা বানাচ্ছে দিনের পর দিন? গবেষণায় যে ফল পাওয়া গেছে, তা থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না, যেসব শিক্ষার্থী এআই ব্যবহার করেছেন, তাদের মধ্যে ‘মানসিক দুর্বলতা’ তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সম্ভবত গবেষণার পদ্ধতির কারণেই, মানে গবেষণাটি যেভাবে পরিচালিত হয়েছে, সেই কারণে ফলাফল এমন হয়েছে।

তবে এআইয়ের দিন আসলে শুরু হয়েছিল ১৯৭০ এর দশকেই। যখন ক্যালকুলেটরের ব্যবহার শুরু হয়। মানুষ হাতে গোনার পরিবর্তে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এমনকি ক্যালকুলেটরের ব্যবহার শুরুর পর এসব যন্ত্রের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে স্কুল-কলেজের পরীক্ষা আগের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন করে দেয়া হয়েছিল।
তবে হাত দিয়ে হিসাব করার বদলে শিক্ষার্থীদের ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পর মানদণ্ড অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। তাই শিক্ষার্থীদের আগের সমান বা তার চেয়েও বেশি কঠোর পরিশ্রম করতে হতো।

 
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ